কৃষি তথ্য সার্ভিস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থা। ১৯৬১ সালে সংস্থাটির যাত্রা হয়। ১৯৮৫ সালে কৃষি তথ্য সার্ভিস বিভক্ত হয়ে এক তৃতীয়াংশ জনবল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চলে যায়। ২০০৮ সালের আগে সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ ছয়টি আঞ্চলিক অফিস এবং ঠাকুরগাঁও ও কক্সবাজার লিয়াজোঁ অফিস ছিল। বর্তমানে বরিশাল, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটিতে তিনটি আঞ্চলিক অফিসসহ ১১টি আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৃষি তথ্য সার্ভিসের মিডিয়াভিত্তিক কার্যক্রম সুচারুভাবে চলছে।
রূপকল্প (Vision) : আধুনিক কৃষি তথ্য সেবা সহজলভ্যকরণ
অভিলক্ষ (Mission) : প্রিন্ট ইলেকট্রনিক ও আইসিটি গণমাধ্যমের সহায়তায় কৃষি বিষয়ক তথ্য ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের কাছে সহজলভ্য করে জনসচেতনতা সৃষ্টি;
কৌশলগত উদ্দেশ্যে : কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের কৃষিবিষয়ক জ্ঞান সমৃদ্ধকরণ;
তথ্য প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষি তথ্য সার্ভিসের কার্যক্রম
প্রচারই প্রসার এ সত্যকে ধারণ করে কৃষি তথ্য প্রযুক্তি বিস্তারে কৃষি তথ্য সার্ভিস প্রিন্ট মিডিয়া, বেতার, টেলিভিশন, আইসিটি, প্রোডাকশন ও প্রজেকশন এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি বিস্তারের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার কাজ করে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রম কৃষি তথ্য সার্ভিসের মাধ্যমে যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
কৃষিকথা
বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ফার্ম ম্যাগাজিন মাসিক কৃষিকথা প্রকাশ এবং নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করা হয়। বর্তমান কৃষিকথার গ্রাহক সংখ্যা ৮০ হাজারেরও বেশি। আর এর পাঠকের সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি। বিগত ৭৬ বছর ধরে কৃষিকথা কৃষির তথ্য প্রযুক্তি বিস্তার করে কৃষি উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে।
সম্প্রসারণ বার্তা
মাসিক বিভাগীয় নিউজ বুলেটিন চার রঙে প্রকাশ ও বিতরণ করা হয়। প্রতি মাসে দুই হাজার কপি সম্প্রসারণ বার্তা দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট অফিসে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কৃষি উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, সফলতা, বিভিন্ন ইভেন্টসের হালনাগাদ খবর ও প্রাসঙ্গিক চিত্র নিয়ে সম্প্রসারণ বার্তা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
কৃষি ডাইরি
কৃষি ডাইরিকে সাধারণ ডাইরি না বলে তথ্যপ্রযুক্তি ডাইরি বলা যায়। আমরা বলি একের ভেতর তিন। কেননা এর মধ্যে ফোন ই-মেইল, সাধারণ ডাইরি এবং কৃষির আধুনিক ও হালনাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি সন্নিবেশিত থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি বিস্তারে অন্যতম মাধ্যম ফোন, ই-মেইল, ওয়েবসাইট ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগের ঠিকানাও এ ডাইরিতে সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া আধুনিক কৃষি তথ্য উপাত্ত, যেমন- বিভিন্ন ফসলের উন্নত জাত, বীজ তথ্য, সারের মাত্রা, সেচ, বালাইনাশক, সর্বশেষ প্রযুক্তির তথ্য, বিভিন্ন পরিসংখ্যান এ ডাইরির প্রধান বিষয়।
অনিয়মিত প্রকাশনা
কৃষক ও কৃষি কর্মী এবং আগ্রহীদের চলমান চাহিদামাফিক সময়ে প্রযুক্তি নির্ভর বই, বুকলেট, পোস্টার, লিফলেট, ফোল্ডার, স্টিকার, ম্যাগাজিন, ব্যানার, ফেস্টুন মুদ্রণসহ বিনামূল্যে বিতরণের মাধ্যমে প্রযুক্তি বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
বেতার কার্যক্রম
বর্তমান দেশে ১২টি বেতার কেন্দ্র থেকে জাতীয় ও আঞ্চলিক কৃষিবিষয়ক শ্রোতা উপযোগী অনুষ্ঠান বিনির্মাণে কৃষি তথ্য সার্ভিস সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করছে। বর্তমান সরাসরি, চিঠি, মেসেজ, ই-মেইল, ফোন-ইন-প্রোগ্রামের মাধ্যমে কৃষি বিশেষজ্ঞের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও তাদের মাঠের সমস্যা সমাধান পাচ্ছেন। চলমান সময়ে ১২টি বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রভাতি, দুপুর, বিকাল এবং সান্ধ্যকালীন মিলিয়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়।
টেলিভিশন
কৃষি তথ্য সার্ভিসের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং সহায়তায় মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান সপ্তাহে ৫ দিন সম্প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বিটিভিতে প্রতিদিনের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান বাংলার কৃষি প্রতিদিন সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে হচ্ছে। দিনের সম্প্রচারিত বাংলার কৃষি অনুষ্ঠান পরবর্তী দিন উপযুক্ত সময়ে পুনঃপ্রচার হচ্ছে। এত দিন বাংলার কৃষির ১ হাজার ২৫০ এর বেশি পর্ব সম্প্রচারিত হয়েছে। জাতীয় ও বিভাগীয় প্রয়োজনে বিষয়ভিত্তিক টকশো, প্রতিবেদন, সফলতার কাহিনী, ডকুড্রামা, টেলপ ও বিজ্ঞপ্তি সময়োপযোগী আকারে সম্প্রচার করা হয়। বিটিভি ছাড়া অন্যান্য প্রাইভেট চ্যানেলেও একই কার্যক্রম চাহিদা এবং গুরুত্ব অনুযায়ী সম্প্রচারিত হচ্ছে।
কৃষি সংবাদ
সময়ের প্রয়োজনে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ থেকে বিটিভির সংবাদে এবং ৬ এপ্রিল ২০০৮ থেকে বাংলাদেশ বেতারে কৃষি সংবাদ প্রচার হচ্ছে। দুই মাধ্যমের কৃষি সংবাদের সার্বিক প্রযুক্তিগত তথ্য ও সহযোগিতা কৃষি তথ্য সার্ভিস দিয়ে আসছে। কৃষি সংবাদ শুনে দেখে অগণিত শ্রোতা দর্শক অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং কৃষি উন্নয়নে মাত্রিক অবদান রাখছেন।
কৃষি ভিডিও চিত্র
কৃষি তথ্য সার্ভিস সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক স্পট, ফিলার, প্রামাণ্যচিত্র, ফিল্ম তৈরি করেছে এবং করছে। এগুলো আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনেমা ভ্যানের সহায়তায় প্রর্দশন করার মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তি বিস্তারে বিশেষ সহায়তা করছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কৃষি প্রযুক্তিভিক্তিক বিভিন্ন ভিডিও, ডকুমেন্টারি, ফিল্ম, ফিলার, নাটক নির্মাণ এবং গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। এ ভিডিওগুলো গ্রামীণ পর্যায়ে মোবাইল সিনেমা ভ্যানের মাধ্যমে প্রর্দশন করা হয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম
কৃষি তথ্য সার্ভিস মিডিয়াভিত্তিক বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্ন শিরোনামে কৃষক, কৃষি কর্মী, কৃষিবিদ, সার্ভিস প্রোভাইডার ও স্টেক হোল্ডারদের আধুনিক প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করছে। এতে দক্ষ মিডিয়া কর্মী ও আইসটিবান্ধব কর্মী তৈরি হচ্ছে যারা কৃষির আধুনিক লাগসই তথ্যপ্রযুক্তিকে বাস্তবায়ন করে কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে।
ওয়েবসাইট
কৃষি তথ্যপ্রযুক্তি তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে কৃষি তথ্য সার্ভিসকেও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক মানসম্মত আইসিটি সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইট। এ ওয়েবসাইটটি ডায়নামিক এবং নিয়মিত হালনাগাদ করা টেক্সট, অডিও, ভিডিও, নিউজভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট। হালনাগাদ কৃষিবিষয়ক তথ্যসমৃদ্ধ www.ais.gov.bd ওয়েবসাইট কৃষি’র চলমান চাহিদা পূরণ করছে।
ই-বুক
মাল্টিমিডিয়া ই-বুক হলো কোনো বিষয়ে টেক্সট কনটেন্টের সাথে অডিও, ভিডিও, অ্যানিমেশন এসবের সমন্বয়ে প্রণীত ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল বই। এগুলো সিডি আকারে সবকয়টি এআইসিসিতে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফসল ও প্রযুক্তি নির্ভর ৪০টি মাল্টিমিডিয়া ই-বুক তৈরি করা হয়েছে। আগামীতে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
আইসিটি ল্যাব
ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় একটি করে দশটি আইসিটি ল্যাব রয়েছে। এসব আইসিটি ল্যাবের মাধ্যমে বছরব্যাপী কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মী, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের ই-কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
কৃষি ইনফরমেশন বুথ (কিয়স্ক)
টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে সহজেই এ বুথ (কিয়স্ক) থেকে কৃষি বিষয়ক অনলাইন-অফলাইন কৃষি তথ্য পাচ্ছেন। প্রয়োজন হলে প্রিন্ট করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ১১টি কিয়স্ক তৈরি হয়েছে। সদর দপ্তরে দুইটি কিয়স্ক রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন অগণিত আগ্রহী ব্যক্তি ব্রাউস করে অন লাইনভিত্তিক কৃষি তথ্য সেবা গ্রহণ করেন।
কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি)
কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম গ্রাম পর্যায়ে ৪৯৯টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামের তৃণমূল পর্যায়ে কৃষি তথ্য প্রযুক্তিকে কৃষক ব্যবহার উপযোগী আকারে কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র সম্পূর্ণ কৃষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এসব কেন্দ্রের লক্ষ্য হলো কৃষকের চাহিদামাফিক আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বা তথ্য সময়মতো কৃষক বা কৃষি সংশ্লিষ্টদের কাছে সহজলভ্য করা।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিটি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র বা এআইসিসিতে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ, ওয়েবক্যাম, ক্যামেরা, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ড সিস্টেম, মোবাইল ফোন সেট, মোবাইল ফোনের সিম, ইন্টারনেট মডেম (সিমসহ), স্ক্রিন, স্ক্যানারসহ যাবতীয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সরবরাহ দেয়া হয়েছে। এআইসিসিতে কৃষক ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি কৃষিবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষক এসব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র বা এআইসিসির সদস্য ও প্রতিবেশী কৃষকের মাঝে পৌঁছে দেন। এছাড়া বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি সংবলিত বুকলেট, লিফলেট, ফোল্ডার, পোস্টার, ম্যাগাজিন, ডকুড্রামা, ডকুমেন্টারি ফিল্ম, ফিলার, কৃষিবিষয়ক চলচ্চিত্র কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র বা এআইসিসির মাধ্যমে কৃষকের কাছে সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে কৃষক কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সেবা পেয়ে থাকেন। তাছাড়া দেশে জরুরি মুহূর্তে যেমনÑ খরার সময় করণীয়, বন্যায় করণীয়, ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের পর করণীয়Ñ এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কী কী করা উচিত সেসব বিষয়ে এআইএসের ওয়েবসাইটে তথ্য সরবরাহ করা হয়। এসব তথ্য কৃষক সংগ্রহ করে উপকৃত হতে পারেন। অপর পক্ষে কৃষিবিষয়ক কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে ক্লাবের সদস্যরা সরবরাহকৃত মোবাইলের সাহায্যে এআইএসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান নেন। কৃষিবিষয়ক সমস্যা মুখে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা না গেলে বা ই-মেইলে সঠিক বিবরণ তুলে ধরা সম্ভব না হলে ওয়েব ক্যামেরা সাহায্যে ছবি তুলে রোগাক্রান্ত বা পোকায় আক্রান্ত ফসলের ছবি, পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণ ছবিসহসহ ই-মেইল করতে পারেন বা ওয়েব ক্যামের সামনে সমস্যা-বস্তুটি নিয়ে এসে সরাসরি ছবি দেখিয়ে ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পেতে পারে। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ছাড়াও এলাকার জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তারা অন্যান্য তথ্য যেমন-চাকরির বিজ্ঞপ্তি, কৃষি পণ্যের বাজারদর, আবহাওয়া বার্তা, বিভিন্ন পরীক্ষার ফল, সরকারি বিভিন্ন অফিসের ফরম, পাসপোর্ট, সরকারি গেজেট ইন্টারনেটের মাধ্যমে পেতে পারেন।
কৃষকের কাছে সার সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কৃষি তথ্য সার্ভিস, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় প্রতিটি এআইসিসিতে সার সুপারিশমালা প্রিন্ট করে কৃষকের হাতে তুলে দেয়া হয়। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সার সুপারিশ করার লক্ষ্যে একটি সফটওয়ার তৈরি করেছে যার মাধ্যমে যে কোনো স্থানের মাটি সম্বন্ধে কিছু মৌলিক তথ্য যেমনÑ ইউনিয়নের নাম, উপজেলার নাম, ভূমির শ্রেণি (উঁচু, মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু, নিচু, অতি নিচু), চাষের সময়, ফসলের ধরন, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রভৃতি ব্যবহার করে এবং ওই জমির উর্বরতা মান অথবা সরাসরি পুষ্টি উপাদানের ভ্যালু বসিয়ে একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে ফসলওয়ারি সারের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। ফলে কৃষক এখন তাদের কাছের এআইসিসি থেকে অতি সহজেই তাদের জমিতে ফসলওয়ারি কোন সার কি পরিমাণ প্রয়োজন তা জেনে সে অনুযায়ী জমিতে সার প্রয়োগ করতে পারবে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করা যাবে সাথে সাথে সারের অপচয়ও রোধ করা যাবে।
কমিউনিটি রুরাল রেডিও (কৃষি রেডিও) স্থাপন
আমার রেডিও আমার কথা বলে (Mr radio, my voice) এ স্লোগানকে ধারণ করে বরগুনা জেলার আমতলীতে অবস্থিত কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে কৃষি রেডিও এফএম ৯৮.৮ নামে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার ১২টি উপজেলায় গ্রামীণ কল্যাণ ও চাহিদাভিত্তিক কৃষিসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়ে থাকে।
বর্তমান শ্রোতা সংখ্যা ২ লাখ; শ্রোতা ক্লাবের সংখ্যা ৫০টি; স্বেচ্ছাশ্রমে স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত (স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা শতাধিক); প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে সম্প্রচার (সকাল ৯টা থেকে ১১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত); মোট অনুষ্ঠান সম্প্রচার ২৫টি (দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিকভিত্তিতে); কৃষি রেডিও সংবাদ ৩ বার (বিকাল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা, রাত ৮টা); বর্তমান কাভারেজ দুইটি জেলার (বরগুনা ও পটুয়াখালী) ১২টি উপজেলা বরগুনার ০১. আমতলী, ০২. তালতলী, ০৩. বরগুনা সদর, ০৪. বেতাগী, ০৫. পাথরঘাটা, ০৬. বামনা উপজেলা। পটুয়াখালীর ০১. সদর, ০২. মির্জাগঞ্জ, ০৩. গলাচিপা, ০৪. কলাপাড়া, ০৫. দশমিনা, ০৬. রাঙ্গাবালী উপজেলা। সম্প্রচার এলাকা দিন দিন বাড়ছে।
কৃষি কল সেন্টার
সরাসরি কৃষি বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে তাৎক্ষণিকভাবে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি তথ্য সার্ভিস ও প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কৃষি কল সেন্টার। যে সেন্টারটিতে যে কেউ বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন ১৬১২৩ নম্বরে। পেতে পারেন কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, বন, পরিবেশ, পুষ্টি বিষয়ক যে কোনো সহজ সরল সময়োপযোগী পরামর্শ। এ সেন্টারটি শুক্রবার ও সরকারি ছুটি ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে কৃষক ও কৃষির সেবায়। কৃষককে প্রতি কলে প্রতি মিনিটে ০.২৫ টাকা হারে (ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ব্যতীত) খরচ বহন করতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ জন কলার কল করে চাহিদামাফিক কৃষি তথ্য সেবা নেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ কল সেন্টার থেকে প্রায় ৪০ হাজার জন উপকারভোগীকে তথ্য সেবা সরবরাহ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
মোবাইল আ্যপস
কৃষিবিষয়ক আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে দুইটি মোবাইল আ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এর একটি কৃষিকথা পত্রিকার। অন্যটি ই-কৃষিভিত্তিক। আ্যাপস দুইটি গুগল প্লে স্টোর থেকে Krishikotha এবং Agriculture Information Service নামে সার্চ দিয়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করার সুবিধা রয়েছে। এ দুইটি অ্যাপস থেকে কৃষি তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজে লাগানো যায়।
প্রিন্ট সামগ্রী প্রকাশ বিতরণ
কৃষি গবেষণালব্ধ আধুনিক তথ্যাদি সহজবোধ্য ও প্রয়োগযোগ্যভাবে কৃষক ও কৃষিজীবীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে বিভিন্ন মুদ্রণ সামগ্রী প্রকাশ এবং বিনামূল্যে-স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। এসব মুদ্রণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে মাসিক কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন কৃষিকথা, সম্প্রসারণ বার্তা, ফোল্ডার, লিফলেট, পোস্টার, বুকলেট।
শোষণ, নিপীড়ন আর বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর ঘটাতে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা ও মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলার কৃষি প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হচ্ছে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসে অগ্রযাত্রার গৌরবোজ্জ্বল অংশীদার। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে কৃষি তথ্য সার্ভিস এরই মধ্যে অর্জন করেছে বঙ্গবন্ধু কৃষি স্বর্ণপদক, জাতীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী পদক এসব। সত্যিকারভাবে কৃষির উন্নয়নে কৃষি তথ্য সার্ভিস জন্মলগ্ন থেকে নিরলসভাবে গণমাধ্যমের প্রায় সবগুলো মাধ্যমের সাহায্যে কৃষি তথ্য প্রযুক্তি গ্রামীণ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দ্রুত বিস্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। কৃষি তথ্য সার্ভিস নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষি প্রযুক্তি বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। শহরের শৌখিন কৃষক থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া ভূমিহীনদেরও তথ্য সেবা প্রদান করছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের সেবা গ্রহণকারী কৃষক, কৃষি কর্মী ও স্টেকহোল্ডারদের সংখ্যা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেবার মান সময় উপযোগী,আধুনিক, সহজলভ্য ও গ্রহণ উপযোগী করে করা হচ্ছে। বহুবিধ সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিস নিরলস কাজ করছে। কৃষির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক, কৃষিতে সাফল্যের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক- এ প্রত্যাশাই সবার। কৃষি সমৃদ্ধিতে আমরা সবাই গর্বিত অংশীদার।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস